প্রিয় শিক্ষার্থী এই পর্বে আমরা যা নিয়ে আলোচনা করবো তা হচ্ছে- রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনারের কাজে সতর্কতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা (Precautions and first aid for refrigerators and air conditioners) তো চলুন শুরু করা যাক।
সতর্কতা বা নিরাপত্তা (Safety):
যে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং মালিকের সমন্বয়ে একদল লোকের নিয়মতান্ত্রিক সমাবেশ ঘটবে এবং সেখানে উৎপাদন বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে বহুবিধ যন্ত্র, যন্ত্রাংশ থাকবে সে প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কশপ বলে। ওয়ার্কশপে প্রবেশ হতে আরম্ভ করে সকল কাজ সম্পাদন শেষে ওয়ার্কশপ পরিত্যাগ পর্যন্ত কতগুলো বিধিনিষেধ মেনে চরতে হয়। এ বিধিনিষেধগুলোকে ওয়ার্কশপ নিরাপত্তার বিধিবিধান বিশেষভাবে মেনে চলতে আগ্রহ সৃষ্টি করতে মাঝে মাঝে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ওয়ার্কশপ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
ওয়ার্কশপে নিরাপত্তার শ্রেণিবিন্যাস:
ওয়ার্কশপে প্রবেশ হতে শুরু করে সকল প্রকার কাজ শেষ করার পর ওয়ার্কশপ ত্যাগ করা পর্যন্ত কতকগুলো বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এ বিধিনিষেধগুলোকে ওয়ার্কশপে নিরাপদে কাজ করার নিয়মকানুন বলে। বিধিগুলো অবহেলা করলে দুর্ঘটনা ঘটবে।
এ দুর্ঘটনার পরিমাণ নিম্নের দুটি অংশে বিভক্ত:
(ক) শ্রমিকদের অসতর্কতা
(খ) মালিকদের ত্রুটি জনিত দুর্ঘটনা যার পরিমাণ ২৫% ভাগ।
সতর্কতা প্রধানত ৪ প্রকার, যথা-
(ক) সাধারণ সতর্কতা (General safety precautions)
(খ) পোশাকজনিত সতর্কতা (Cloth safety precautions)
(গ) যন্ত্রপাতির সতর্কতা (Equipment safety precautions)
(ঘ) কর্মমালার কর্মজনিত সতর্কতা (Workshop work safety precautions)
সাধারণ সতর্কতাসমূহ:
(ক) ওয়ার্কশপ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।
(খ)বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা নিষেধ।
(গ)পরিচিত বা অপরিচিত কোন কিছুতেই হাত না দেয়া।
(ঘ)শারীরিক ও মানসিক অসুস্থাবস্থায় কর্মশালায় প্রবেশ নিষেধ।
(ঙ)রাগান্বিত অবস্থায় কর্মশালায় প্রবেশ নিষেধ।
পোষাক ও শারীরিক সতর্কতা:
(ক) কর্মশালায় অপরিষ্কার পোশাক পরিধান করা যাবে না।
(খ) ঢিলাঢালা (Loose) পোশাক অবশ্যই অনিরাপদ।
(গ) পাঞ্জাবি ও শাড়ি জাতীয় পোশাক কর্মশালায় পরিত্যাজ্য।
(ঘ) কাজের সময় অ্যাপ্রন (Apron) ব্যবহার করতে হবে।
(ঙ) বুট বা জুতা পরিধান করতে হবে ও স্যান্ডেল পরিহার করতে হবে।
(চ) হাফ হাতা টাইট র্শাট পরা উচিত।
(ছ) লম্বা খোলা চুল বর্জণীয়।
(জ) গগলস ব্যবহার করতে হবে (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
(ঝ) হেলমেট ব্যবহার করতে হবে (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
(ঞ) হ্যান্ড গ্লোভস পরতে হবে (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
যন্ত্রপাতির সতর্কতা:
(ক) যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার জানতে হবে।
(খ) যন্ত্রপাতির কার্যপদ্ধতি জানতে হবে।
(গ) কাজে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি ও টুলস্ বাছাইয়ের জ্ঞান থাকতে হবে।
(ঘ) যন্ত্রপাতি সযত্নে ও সতর্কতার সাথে পরিচালনা করতে হবে।
(ঙ) যন্ত্র চালু করার সময় কোন যন্ত্রপাতির নষ্ট বা ক্ষতি না হয়।
(চ) ধারালো যন্ত্রপাতি সাবধানে রাখতে হবে।
কর্মশালায় কর্মজনিত সতর্কতা:
(ক) কারখানা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
(খ) কারখানায় সজ্জিত যন্ত্রপাতির পরিচালনায় জ্ঞান থাকতে হবে।
(গ) কারখানায় চলাচল ও কথাবার্তাজনিত ভদ্রতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
(ঘ) নিরাপত্তা মূলক পোশাক পরিধান করতে হবে।
(ঙ) বিনা অনুমতিতে কোন যন্ত্র পরিচালনা করা যাবে না।
(চ) কার্যসম্পাদনের টেবিল, ভাইস প্রভৃতি শৃঙ্খলার সাথে সাজিয়ে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রাখতে হবে।
(ছ) অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রসহ অন্যান্য নিরাপত্তামূলক যন্ত্র ও দ্রব্যের (্ঔষধ) ব্যবহার বিধি জানতে হবে।
ওয়ার্কশপে নিরাপদ পোশাক ও সরঞ্জামাদির ব্যবহার:
ওয়ার্কশপে কাজের জন্য ব্যবহার্য নিরাপদ পোশাককে ওভারঅলস (Overalls) বলে। ওভারঅল এর বোতামগুলো ঠিকমতো আটকানো উচিত এবং মেশিনে কাজের সময় ওভারঅল এর হাতা কনুই পর্যন্ত ভালভাবে মুড়িয়ে নিতে হবে, যাতে কোন যন্ত্রাংশে জড়িয়ে না যায়।
ওয়ার্কশপে কাজের সময় কোন অবস্থায় ঢিলাঢালা বা লুজ পোশাক পরিধান করা মোটেই উচিত নয়। শ্রমিককে অবশ্য অ্যাপ্রন বা হাফহাতা টাইট সার্ট পরিধান করতে হবে। ঢিলা পোশাক যে কোন মুহূর্তে ঘূর্ণায়মান যন্ত্র বা যন্ত্রাংশে জড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কাজের উপযোগী জুতা/বুট পরিধান করা প্রত্যেক শ্রমিকের উচিত। কাজ অনুসারে হাত, চোখ এবং মাথা রক্ষা করার জন্য যথাক্রমে হ্যান্ড গ্লোভস, গগলস এবং হেলম্যাট ব্যবহার করতে হবে। মাথায় চুল ছোট রাখা বা প্রয়োজনে টুপি পরিধান করা বাঞ্ছনীয়।
সরঞ্জামাদির বর্ণনাঃ ওয়ার্কশপ তথা কাজের জায়গা সবসময় পরিপাটি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ওয়ার্কিং বেঞ্চের উপর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় টুলস (যন্ত্রপাতি)নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখতে হবে। যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং যন্ত্রপাতি সযত্নে ও সতর্কতার সাথে পরিচালনা বা ব্যবহার করতে হবে। ধারালো কর্মকর্তা বা শিক্ষক এর অনুমতি নিয়ে মেশিনপত্র চালু ব্যবহার করা বাঞ্ছনয়ি।
[রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনারের কাজে সতর্কতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা (Precautions and first aid for refrigerators and air conditioners)]
প্রাথমিক চিকিৎসা: কারখানার যে অংশে যে প্রকৃতির দুর্ঘটনা ঘটার আমংকা থাকে সেক্ষেত্রে সেই দরনের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে দ্রব্যাদি হলো-
১। বি.পি ব্লেড ২টি।
২। বি.পি হ্যান্ডল ১টি।
৩। ছোট কাঁচি সার্জিক্যাল ১টি।
৪। ডেটল বা স্যাভলন ছোট বোতল ১টি।
৫। তুলা২/৪ ইঞ্চি ২টি।
৬। সার্জিক্যাল গজ ৬ প্যাকেট।
৭। রোলার গজ (ব্যান্ডেজ) ২,৪,৬ ইঞ্চি এর ২টি করে রোল।
৮। টিংচার আয়োডিন ১ হতে ২ আউন্স একমাত্র চামড়া উঠে বা ছিঁড়ে গেলে খুব সামান্য রক্তক্ষরণ হলে ব্যবহার করা যাবে।
৯। নিওবেকরিন অয়েন্টমেন্ট সামান্য পরিমাণ ক্ষতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
১০। বিভাসিন অয়েন্টমেন্ট সামান্য পরিমাণ ক্ষতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
১১। ডার্মাজিন ক্রিম সাধারণত পুড়ে গেলে (বৈদ্যুতিক শক ব্যতীত) পোড়া চামড়া নরমাল স্যালাইন সোডিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত জীবাণুমুক্ত দ্রবণ দ্বারা ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে।
১২। সাপ্রেটল ছয় প্যাকেট। পোড়া বা ক্ষতস্থানে ডার্মাজিন ক্রিম লাগানোর পর প্যাকেট হতে সাপ্রেটল বের করে লাগিয়ে দিতে হবে।
১৩। ব্যাথানাশক প্যারাসিটামল বড়ি ৫০০ মিঃ গ্রাম ১০টি।
১৪। এন্টসিড (অম্লনাশক) বড়ি ১০টি।
১৫। নরম্যাল স্যালাইন ৫০০ সিসি একটি ব্যাগ।
মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাদেরকে বিশেষ ধন্যবাদ। যে বিষয়টি নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করেছি তা হলো রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনারের কাজে সতর্কতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা (Precautions and first aid for refrigerators and air conditioners) আশা করি আমরা বুঝতে পেরেছি।