লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পরে আমাদের ভাইভার পূর্বে আমাদের যে সকল বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়, সে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা।
চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)।
চাকুরী লাভের প্রথম শর্তই হচ্ছে জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। যে পদে বা যে পর্যায়ে চাকরির জন্য আশা নিয়ে আছো, তােমাকে সেই পদ বা সে পর্যয়ের জ্ঞান বা মেধার উপযুক্ত অবশ্যই হতে হবে। কাজেই এই ধারণা খুব স্বাভাবিক যে, যাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা রয়েছে তারাই চাকরি পাওয়ার যােগ্য। আসলেই কি তাই? না, একটি চাকরি লাভের পবশর্ত যদিও উপযুক্ত জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা কিন্তু একেবারে প্রথম ও প্রয়ােজনীয় শর্তটি হচ্ছে তােমার সম্পর্কে চাকরি দাতার প্রথম ধারণা। একটি প্রবাদ আছে, “প্রথমে দর্শন তারপর গুণের বিচার”।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
যে কোন চাকুরি লাভের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে চাকরিদাতা তােমার সম্পর্কে কি ধারণা করলেন, সেটিই আসল কথা, যে ব্যাপারটি ঘটে দেখা হওয়ার প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যে। দর্শন মানে কি সন্দর চেহারা বা দামী পােশাক নয়। এই দর্শন মানে হচ্ছে কতটা মার্জিতভাবে ও নিপুণভাবে তুমি চাকুরিদাতার সাক্ষাৎপ্রার্থী হচ্ছে, সেই ব্যাপারটি। এক্ষেত্রে বলতে হয়, যদি সাক্ষাৎকালে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপনই করতে না পারাে, চাকুরি ক্ষেত্রে তােমার দক্ষতা কতটা উর্ষতার পরিচয় দেবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
সঠিক সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপনাই যে কোন চাকরি প্রার্থীর সাফল্যের প্রথম শর্ত। সমাজ বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারটিকে বলেন “হ্যালাে ইফেক্ট” এর মানে হচ্ছে, প্রথম দর্শনের কয়েক মিনিটের মধ্যে যদি ইতিবাচক ভাবনা চাকুরিদাতার মনে জাগিয়ে তুলতে পারাে, তাহলে চাকুরি লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম দেখার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চাকুরিদাতা চাকুরিপ্রার্থীর পেশাগত যােগ্যতা, সামাজিক শ্রেণী, নীতি এবং জ্ঞান সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা করে নেন। প্রার্থীর পােশাক-আশাক, চলাফেরা, তার কথা-বার্তা, কণ্ঠস্বরের পরিমিতি এসব কিছু সম্পর্কে প্রথম দর্শনেই ধারণা করে নেয়া যায়। প্রথম ধারণাই যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে চাকরি লাভের আশা হয়ে যায় সুদুর পরাহত। বেশির ভাগ চাকুরিদাতাই মনে করেন, যে নিজের প্রতি যত্নশীল হয়, সে তার চাকুরির প্রতিও যত্নশীল হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় মানুষেরাই সাধারণত বেশি মেধাবী, পছন্দীয় এবং বিশ্বাসযােগ্য হয়। পােশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে আকর্ষণীয়তা থাকলে চাকরি লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। চাকুরী প্রার্থী হিসেবে চাকুরিদাতার সম্মুখে নিজেকে প্রথমবারের মত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে কি কি করণীয়, তার একটি ধারণা থাকলে নবাগত চাকরি প্রার্থীদের অনেক উপকার হবে। তাই জেনে নাও প্রথম কয়েক মিনিটের এই করণীয়গুলাে সম্পর্কে।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
তােমাকে যথেষ্ট ভালাে দেখাতে হবেঃ
এই ভালাে দেখানােটাই সাফল্যের ক্ষেত্রে অনেকটা প্রয়ােজনীয়। ভালাে পােশাকে নিজেকে উপস্থাপনার সাথে তােমার উচ্চ আত্মসম্মানবােধ এবং চাকুরি সন্তুষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। প্রথম দর্শনে ভালাে দেখানাের ব্যাপারটি পেশাগত ইমেজেকে প্রতিফলিত করে। তােমাকে অবশ্যই পােশাক-আশাকের মধ্যে দিয়ে এই ভাব ফুটিয়ে তুলতে হবে যে, তুমি অনেক বেশি উপযুক্ত ও নির্ভরযােগ্য। কোন নামকরা কোম্পানীতে চাকুরির জন্য স্বাক্ষাতকার দিতে যাওয়ার পূর্বে, সেই কোম্পানীর বাৎসরিক রিপাের্টের একটি কপি সংগ্রহ করে সেখানকার কর্মচারি-কর্মকর্তারা কি ধরনের পােশাক-আশাক পরছেন, তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারাে।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
শরীরের ভাষার দিকে দৃষ্টি দাওঃ
স্বাক্ষাতকালে কিভাবে চাকুরিদাতার কক্ষে ঢুকছাে, কিভাবে বেরিয়ে গেলে এই ব্যাপারটি তােমার সম্পর্কে চাকুরিদাতার প্রাথমিক ধারণাকে সমৃদ্ধ করে। মনােবিজ্ঞানী এলবার্ট মেহরাবিয়ান বলেন, চাকুরিপ্রার্থী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভের ক্ষেত্রে ৭ ভাগ নির্ভর করে কথার উপর, ৩৮ ভাগ নির্ভর করে কণ্ঠস্বরের উপর এবং ৫৫ ভাগ নির্ভর করে মুখ ভঙ্গির উপর। প্রথম দেখায় ইতিবাচক ধারণা তৈরির প্রথম কাজ হচ্ছে আন্তরিক করমর্দন। চাকুরিদাতা বা স্বাক্ষাতকার গ্রহণকারী প্রথমে হাত না বাড়ালে তুমি প্রথমে হাত বাড়িয়ে দেও। এবার প্রয়ােজনীয় অনুমতি নিয়ে ধীরে চেয়ার টেনে বস চাকরিদাতার সম্মুখে। এসময় এমন ভাব দেখাবে না যেন, তােমার চাকুরিটা খুবই প্রয়ােজন বা তার বা তাদের মন যােগানাের জন্য বিগলিত হয়ে আছে। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে দ্বিধা করবে না। সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার মাধ্যমে প্রার্থীর সতর্কতা, নির্ভরযােগ্যতা, আস্থাশীলতা এবং দায়িত্বশীলতার প্রকাশ ঘটে।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
বক্তব্য পরিষ্কারভাবে বলঃ
তােমার বক্তব্য অবশ্যই আস্থার সাথে এবং বিশ্বাসযােগ্যভাবে উপস্থাপন কর। এমনভাবে বক্তব্য ফুটিয়ে তুল যে, তুমিই এই চাকুরির জন্য সবচেয়ে যােগ্য এবং ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেও। অত্যাধিক মনযােগ আকর্ষণেরও চেষ্টা করবে না। বক্তব্য অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হওয়া সমীচিন। কম কথা বলতে শিখ। কথাবলার অভ্যাসটি রপ্ত করার জন্য সাপ্তাহিক কোনাে সংবাদ বা ম্যাগাজিন বা দৈনিক সংবাদপত্র পড়তে পারাে। কিভাবে কথা বলছে, এই ব্যাপারটি খুবই লক্ষণীয়। ভালাে হয় যদি তােমার নিজের কথা টেপে ধারণ করে নিজেই শােন। এতে করে তােমার কষ্ঠ কেমন, তা বুঝতে পারবে। প্রয়ােজনে কোন নামী অভিনেতা বা অভিনেত্রীর পরা কবিতা বা গল্প পঠনের ক্যাসেট সংগ্রহ করে শােন এবং নিজেও তেমনভাবে বলতে চেষ্টা কর। এভাবে তােমার নিজের কণ্ঠস্বরের উন্নতি হবে।
#চাকুরী পাওয়ার জন্য ভাইভার পূর্বে যা যা করতে হবে (Preparation for Viva)#
পরিশেষে, কর্মক্ষেত্রে চাকুরিপ্রার্থী হিসেবে সফল হতে হলে প্রথমেই নিজেকে সবচেয়ে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে হবে, সুন্দরভাবে প্রত্যয়ের সাথে কথা বলতে হবে। তাহলেই দেখবে, চাকুরি ঠিকই তােমার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।