এখন যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো- রেফ্রিজারেশন এবং এয়ারকন্ডিশনিং এর প্রচলন ও ইতিহাস
(Refrigeration and Air conditioning History), রেফ্রিজারেটরের সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তা এবং রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারের প্রকারভেদ। তো চলুন শুরু করা যাক।
রেফ্রিজারেশন (Refrigeration): রেফ্রিজারেশন অর্থ হিমায়ন বা ঠান্ডাকরণ পদ্ধতি। অর্থাৎ কোন বস্তু বা আবদ্ধ স্থানের তাপ সরিয়ে বা তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার কৌশলকে রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি বলে। এটি পঁচনশীল খাদ্যবস্তু সংরক্ষণ, বরফ উৎপাদন, আইসক্রিম তৈরি ও আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এয়ারকন্ডিশনিং (Air Conditioning): এয়ারকন্ডিশনিং অর্থ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা আরামদায়ক পরিবেশ। অর্থাৎ কোন আবদ্ধ কক্ষ বা স্থানে বাতাসের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ধুলাবালি পরিষ্কার, রোগমুক্তকরণ ও বাতাস আদান-প্রদানের মাধ্যমে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার কৌশলকে এয়ারকন্ডিশনিং বলে। এটি হিটিং ও কুলিং পদ্ধতিতে হয়। এয়ারকন্ডিশনিং রুমের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ২২০ সে. হতে ২৬০ সে. এবং শীতকালে ১৮০ সে. হতে ২৪০সে. থাকে।
রেফ্রিজারেটর (Refrigerator): রেফ্রিজারেটর অর্থ শীতক বা শীতল করা যন্ত্র। অর্থাৎ রেফ্রিজারেশন সাইকেল ব্যবহার করে খাদ্য বস্তু সংরক্ষণ বা জমা রেখে শীতলায়ন বা ঠান্ডাকরণ প্রক্রিয়ার বস্তুকে রেফ্র্রিজারেটর বলে।
রেফ্রিজারেটরের সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তা:
(ক) খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ
(খ) অর্থ সাশ্রয়
(গ) সময় সাশ্রয়
(ঘ) খাদ্যের পুষ্টিমান
(ঙ) খাদ্যের গুণাগুণ
(চ) ওষুধ সংরক্ষণ
(ছ) অপচয় রোধ
(জ) অতিথি আপ্যায়ন
(ঝ) কোমল পানীয় প্রদর্শন
(ঞ) আইসক্রিম সংরক্ষণ।
রেফ্রিজারেটরের প্রকারভেদ:
ঠান্ডাকণের উপর ভিত্তি করে রেফ্রিজারেটর ৩ প্রকার, যথা-
(ক) ফ্রস্ট টাইপ রেফ্রিজারেটর (Frost type Refrigerator)
(খ) ডি-ফ্রস্ট টাইপ রেফ্রিজারেটর(De- Frost type Refrigerator)
(গ) নন-ফ্রস্ট টাইপ রেফ্রিজারেটর (Non- Frost type Refrigerator)।
রেফ্রিজারেটরে ২টি চেম্বার থাকে, যেমন-
(ক) ফ্রিজার বা ডিপ ( যার তাপমাত্রা ০০ সে. হতে ৫০ সে. থাকে)
(খ) নন-ফ্রিজার বা নন-ডিপ (যার তাপমাত্রা ০০ সে. হতে (১৫০ সে. থাকে)
এয়ারকন্ডিশনারের প্রকারভেদ:
ব্যবহার বা গঠনের দিক অনুসারে এয়ারকন্ডিশনার ৪ প্রকার, যথা-
(ক) উইন্ডো টাইপ এয়ারকন্ডিশনার (Window type Air Conditioner)
(খ) স্প্লিট টাইপ এয়ারকন্ডিশনার (Split type Air Conditioner)
(গ) প্যাকেজ এয়ারকন্ডিশনার (Package Air Conditioner)
(ঘ) সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনার (Central Air Conditioner)।
রেফ্রিজারেশন পদ্ধতির ইতিহাস:
(ক) সর্বপ্রথম চীন দেশে বরফ সংগ্রহ করে গ্রীষ্মকালে পানীয় দ্রব্য ঠান্ডা করে বিক্রয় ও ব্যবহার করা হতো।
(খ) ১৮২০ সালে কৃত্রিম বরফ তৈরি করা হয়।
(গ) ১৮ শতকের মাঝের দিকে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার স্যার জ্যাকোব পারকিন্স (Jacob Perkins) আধুনিক কম্প্রেশন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
(ঘ) ১৮২৪ সালে মাইকেল ফ্যারাড অ্যাবজর্পশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
(ঙ) ১৮৫৫ সালে তাপচালিত অ্যাবজর্পশন রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়।
(চ) ১৯১০ সালে আবাসিক মেকানিক্যাল রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়।
(ছ) ১৯১৩ সালে জেএম লারসেন (J.M. Larsen) আবিসিক রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেন।
(জ) ১৯১৮ সালে কেলভিনেটর কোম্পানি অটোমেটিক রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার হয়।
(ঝ) ১৯২০ সালে মেকানিক্যাল রেফ্রিজারেশন পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন এয়ারকুলার আবিষ্কার হয়।
(ঞ) ১৯২৬ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক হার্মেটিক বা সিল্ড টাইপ কম্প্রেসরযুক্ত রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার হয়।
(ট) ১৯২৭ সালে আমেরিকান ক্যারিয়ার নামক প্রকৌশলী এয়ারকন্ডিশনার যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
(ঠ) ১৯৩০ সালে গাড়িতে অটোমোবাইল এয়ারকন্ডিশনার আবিষ্কার হয়।
(ড) ১৯৪০ সালে আবাসিক গৃহে সার্বিকভাবে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার হয়।